পুরীর জগন্নাথ মন্দির – পবিত্র তীর্থস্থান, ওড়িশা | Progotir Bangla
পুরীর জগন্নাথ মন্দির – পবিত্র তীর্থস্থান, ওড়িশা | Progotir Bangla
Blog Article
পুরীর জগন্নাথ মন্দির ভারতের অন্যতম প্রধান তীর্থস্থান এবং হিন্দু ধর্মের চার ধামের মধ্যে একটি। এটি ওড়িশার পুরী শহরে অবস্থিত এবং ভগবান জগন্নাথ, তাঁর ভাই বলরাম ও বোন সুভদ্রার উপাসনাস্থল। মন্দিরটি শুধুমাত্র ধর্মীয় দিক থেকে নয়, ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ইতিহাস ও স্থাপত্য
জগন্নাথ মন্দিরের ইতিহাস ১২শ শতাব্দীতে রাজা অনন্তবর্মণ চোড়গঙ্গ দেবের শাসনামলে শুরু হয়। মন্দিরটি খাস পুরী Jagannath Temple in Puri শৈলীতে নির্মিত, যার প্রধান গম্বুজ প্রায় ৬৫ মিটার উঁচু। মন্দিরের গর্ভগৃহে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার কাঠের মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে, যা প্রতি বারো বা উনিশ বছর অন্তর নবকলেবর উৎসবে পরিবর্তন করা হয়।
বিশেষ বৈশিষ্ট্য
পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা একে আরও রহস্যময় করে তুলেছে। যেমন:
• মন্দিরের শিখর থেকে পতাকা সবসময় বাতাসের বিপরীত দিকে ওড়ে।
• মন্দিরের ভিতরে প্রবেশের পর সমুদ্রের গর্জন শোনা যায় না।
• মহাপ্রসাদ রান্নার জন্য ব্যবহৃত সাতটি হাঁড়ি একে অপরের উপর রাখা হয়, কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো ওপরের হাঁড়ির খাবার আগে রান্না হয়।
রথযাত্রা উৎসব
পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের সবচেয়ে বিখ্যাত উৎসব হলো রথযাত্রা। প্রতি বছর আষাঢ় মাসে (জুন-জুলাই) এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার বিশাল রথ টেনে গুণ্ডিচা মন্দিরে নিয়ে যাওয়া হয়। লক্ষ লক্ষ ভক্ত এই উৎসবে অংশ নেন এবং বিশ্বাস করা হয় যে এই রথ টানলে পুণ্য লাভ হয়।
মহাপ্রসাদ ও ভোগ
পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের মহাপ্রসাদ বিশ্বের অন্যতম পবিত্র প্রসাদ হিসেবে গণ্য করা হয়। এটি একসঙ্গে হাজার হাজার ভক্তের জন্য প্রস্তুত করা হয় এবং আনন্দ বাজারে বিতরণ করা হয়। এখানে নিরামিষ রান্নার বিভিন্ন পদ যেমন খিচুড়ি, দাল, শাক এবং মিষ্টি পাওয়া যায়।
ভ্রমণ ও দর্শন সময়
পুরীর জগন্নাথ মন্দির দর্শনের জন্য সারা বছরই ভক্তদের ভিড় থাকে, তবে রথযাত্রার সময় সবচেয়ে বেশি ভিড় হয়। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে দর্শনের সুযোগ রয়েছে। পুরীতে পৌঁছানোর জন্য ভুবনেশ্বর বিমানবন্দর এবং রেলস্টেশন থেকে সহজেই যাতায়াত করা যায়।
উপসংহার
পুরীর জগন্নাথ মন্দির শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় স্থান নয়, এটি আধ্যাত্মিক শক্তি, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের এক অনন্য প্রতীক। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এটি ভক্তদের কাছে এক পবিত্র তীর্থস্থান হিসেবে রয়ে গেছে। মন্দিরের রহস্যময় বৈশিষ্ট্য, ঐতিহাসিক গুরুত্ব এবং বিশাল রথযাত্রা একে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। ভক্ত এবং পর্যটকদের জন্য এটি এক অসাধারণ গন্তব্য।